আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসআইআর সংক্রান্ত এনুমারেশন ফর্ম বিলি করবে কমিশন। এই পর্বের মধ্যেই বিএলও-রা যাবেন প্রত্যেক বাড়িতে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে সূচক ধরে এই কাজ শুরু করেছে কমিশন।
ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় রাজ্য জুড়ে ‘এনুমারেশন ফর্ম’ বিলি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সংলগ্ন দফতরে সংশ্লিষ্ট বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) ফর্ম দিয়ে এসেছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, যত ক্ষণ না রাজ্যের প্রতিটি মানুষের ফর্ম পূরণ হচ্ছে, তত ক্ষণ তিনিও ফর্ম পূরণ করবেন না।
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘যতক্ষণ না বাংলার প্রতিটি মানুষ ফর্ম পূরণ করছেন, আমি নিজে কোনও ফর্ম পূরণ করিনি এবং করবও না।’ মমতা আরও লিখেছেন, ‘গতকাল (বুধবার) দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএলও আমাদের পাড়ায় এসেছিলেন তাঁদের নির্দিষ্ট কাজ করতে। কর্মসূত্রে, আমার রেসিডেন্স অফিসে এসে রেসিডেন্সের ক’জন ভোটার জেনেছেন এবং ফর্ম দিয়ে গেছেন।’ অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট বিএলএ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির লাগোয়া তাঁর দফতরে এসেছিলেন। তিনি বাড়িতে ক’জন ভোটার আছেন জানতে চেয়ে সেই অনুযায়ী ফর্ম দিয়ে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা এ-ও স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি নিজের হাতে ওই ফর্ম গ্রহণ করেননি।
মুখ্যমন্ত্রী ভবানীপুর বিধানসভার কেন্দ্রের ভোটার। তিনি ওই কেন্দ্রের বিধায়কও। ৭৭ নম্বর বুথে তাঁর নাম তোলার কথা। যে বুথের ভোটকেন্দ্র হরিশ পার্কের পাশে মিত্র ইনস্টিটিউশন স্কুলে। মমতা বরাবরই ওই বুথে ভোট দিতে যান। বুধবার রাত থেকেই বিজেপি-সহ বিরোধীরা বলতে শুরু করেছিল, মুখ্যমন্ত্রী এত দিন বলে আসছিলেন, বাংলায় এসআইআর করতে দেবেন না। সেই তাঁর বাড়িতেই পৌঁছোলেন বিএলও। এবং তিনি ফর্ম গ্রহণ করলেন। যদিও মমতা সে কথা নস্যাৎ করে বৃহস্পতিবার স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি নিজে হাতে ওই ফর্ম গ্রহণ করেননি। সংশ্লিষ্ট বিএলও গিয়ে তাঁর বাড়ির অফিসে ফর্ম পৌঁছে দিয়ে এসেছেন। তিনি নিজে ফর্ম গ্রহণ করেছেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে যা বলা হচ্ছে এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে (আনন্দবাজার ডট কম-এও ওই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশিত হয়েছে তৃণমূলের প্রভাতী মুখপত্রেও) যে, তিনি বাসভবন থেকে বেরিয়ে এসে নিজের হাতে বিএলও-র কাছ থেকে ‘এনুমারেশন ফর্ম’ গ্রহণ করেছেন, তা ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার ‘এসআইআর আতঙ্কের’ প্রতিবাদে রেড রোড থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত ‘মহামিছিল’ করেছিলেন মমতা। মিছিলের শেষে সভা থেকেও এসআইআর-কে এনআরসি চালু করার ‘কৌশল’ বলে সরব হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, যত ক্ষণ না বাংলার সকলের ফর্ম পূরণ হবে, তত ক্ষণ তিনি নিজের ফর্ম পূরণ করবেন না। মমতার ঘনিষ্ঠমহলের বক্তব্য, তিনি এসআইআর নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। সেই আন্দোলন দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে তৃণমূল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই তা ঘোষণা করেছেন। সেই সময়েই তাঁর ‘নিজের হাতে ফর্ম নেওয়া’র মতো ‘খবর’ ছড়িয়ে সেই আন্দোলনকে ‘ভোঁতা’ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসআইআর সংক্রান্ত ‘এনুমারেশন ফর্ম’ বিলি করবে নির্বাচন কমিশন। এই পর্বের মধ্যেই বিএলও-রা যাবেন ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে ‘সূচক’ ধরে এই কাজ শুরু করেছে কমিশন। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্য সংবলিত ফর্ম জমাও নেওয়া হবে। তার পর ৯ ডিসেম্বর প্রাথমিক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে।
.png)
